সিরিয়া নিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যৎ বানী গুলো
বিস্তারিত ভিডিও তে দেখুন
মুলকে শাম’ বা শাম ভূখণ্ড নবী-রাসুলদের ভূখণ্ড। বর্তমান সিরিয়া, ফিলিস্তিন, লেবানন, জর্দান সবই এই শাম ভূমির অন্তর্ভুক্ত। কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় তার বরকত ও পবিত্রতার বর্ণনা রয়েছে। ইতিহাসের অগণিত ঘটনাপ্রবাহ তার সঙ্গে জড়িত। মক্কা-মদিনার পরই যার মর্যাদা স্বীকৃত।
নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিরিয়ার ভূখণ্ড সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যা ইসলামী ঐতিহ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গভীর তাৎপর্য বহন করে। হাদিসের গ্রন্থগুলোতে সিরিয়া, যার প্রাচীন নাম শাম, এক বিশেষ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই অঞ্চলের ভূমি, জনপদ এবং ভবিষ্যৎ ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
শাম বলতে বোঝানো হয়েছে সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনের সম্মিলিত অঞ্চল। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাধিকবার শামের গুণাবলী বর্ণনা করেছেন। আবু হুরাইরা (রাযি.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“তোমরা শামের প্রতি মনোযোগ দাও, কারণ এটি আল্লাহর পছন্দনীয় ভূমি। পৃথিবীর উত্তম বান্দাগণ শামে অবস্থান করবেন।” (তিরমিজি)
এছাড়া রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উল্লেখ করেছেন যে, শাম দাজ্জালের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হবে এবং কেয়ামতের আগে এই ভূমিতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী সংঘটিত হবে।
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালের আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, দাজ্জাল পুরো পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করবে এবং তার সর্বশেষ যুদ্ধ শামের ভূমিতে হবে। এক হাদিসে এসেছে:
“দাজ্জাল কেয়ামতের আগে শামে এবং ইরাকে ফিতনা ছড়াবে। মুমিনদের একটি দল শামে অবস্থান করবে এবং আল্লাহ তাদের বিজয়ী করবেন।” (মুসলিম)
শামের দিমাশক (বর্তমান সিরিয়ার রাজধানী) শহরের কাছে ঈসা (আলাইহিস সালাম) দাজ্জালকে হত্যা করবেন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“ঈসা ইবনে মারইয়াম সাদা মিনারার কাছে দিমাশকে অবতরণ করবেন।” (মুসলিম, আবু দাউদ)
শামের ভূখণ্ডে যুদ্ধ এবং ফিতনার বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি বলেছেন, এই অঞ্চলে মুসলমানদের জন্য বড় ধরনের পরীক্ষা আসবে। এক হাদিসে উল্লেখ আছে:
“শামে বড় ধরনের ফিতনা দেখা দেবে, যা মানুষের ইমান পরীক্ষা করবে। তখন উত্তম মুসলমানরা এখানে টিকে থাকবে।” (আহমাদ)
এছাড়াও শামে "মালহামা কুবরা" বা বৃহৎ যুদ্ধের ঘটনা ঘটবে বলে তিনি বর্ণনা করেছেন। এটি হবে কেয়ামতের পূর্বের একটি বড় যুদ্ধ, যেখানে মুসলমান ও শত্রুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হবে।
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শামের জন্য দোয়া করেছেন এবং আল্লাহর বিশেষ রহমত চেয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“হে আল্লাহ! আমাদের শামকে বরকতময় করুন, আমাদের ইয়ামানকে বরকতময় করুন।” (বুখারি)
ইতিহাসের ধারায় দেখা যায় যে, সিরিয়া বা শাম বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড হিসেবে উঠে এসেছে। বর্তমানেও সিরিয়ার ভূখণ্ডে যুদ্ধ, ফিতনা এবং মানুষের দুর্দশা লক্ষ্য করা যায়। ইসলামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, এই অঞ্চল কেয়ামতের পূর্বে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হবে।
শামের ভূমি ইসলামের ইতিহাস এবং ভবিষ্যদ্বাণীতে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীগুলো আমাদের জন্য একটি শিক্ষার দিকনির্দেশনা এবং আশার বার্তা বহন করে। শামের গুণাবলী এবং সেখানে সংঘটিত হতে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ইমান মজবুত করা এবং আল্লাহর রহমত কামনা করা উচিত।
0 تعليقات