আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা ইসরায়েলের |
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
ভূমিকা
সিরিয়া। একটি প্রাচীন সভ্যতার ভূখণ্ড, যা আজকের দিনে ধ্বংসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। কয়েক দশকের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের পর বাশার আল-আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। তবে এই অধ্যায়টি ছিল রক্তাক্ত এবং সংঘাতময়। আসাদ পতনের পর ক্ষমতার শূন্যতা পূরণে শুরু হয় একের পর এক শক্তিশালী রাষ্ট্র ও সংগঠনের প্রভাব বিস্তার। এই বিশৃঙ্খলার মাঝেই ইসরায়েল সিরিয়ার ওপর তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা চালায়, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে।
আসাদের পতনের প্রেক্ষাপট
২০১১ সালের আরব বসন্তের ঢেউয়ে সিরিয়ার জনগণ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এক দশকের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশটি অবশেষে ২০২৮ সালে আসাদের পতনের সাক্ষী হয়। তাঁর পতন কোনো গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আনেনি; বরং শিয়া মিলিশিয়া, সুন্নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী, কুর্দি বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়।
আন্তর্জাতিক শক্তি ভারসাম্যের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে সিরিয়া। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান, এবং তুরস্কসহ বিভিন্ন পক্ষ তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় হয়। এর মধ্যেই ইসরায়েল সিরিয়ার পরিস্থিতিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে এবং একক সিদ্ধান্তে আক্রমণের পথ বেছে নেয়।
ইসরায়েলের উদ্বেগ ও প্রস্তুতি
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ার ভেতর ইরানের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। ইরানের সমর্থিত হিজবুল্লাহ সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থান নিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। আসাদের পতনের পর সিরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বলতা ইসরায়েলকে আক্রমণের সুযোগ দেয়। ২০৩০ সালের শুরুর দিকে, ইসরায়েল গোপনভাবে তাদের সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে।
প্রথমে তারা সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি, অস্ত্রাগার, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নজরদারি চালায়। এর পাশাপাশি, ইসরায়েলি ড্রোন এবং সাইবার যুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করে। এই হামলার পরিকল্পনা ছিল সিরিয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা।
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা
২০৩০ সালের এপ্রিল মাস। এক রাতেই ইসরায়েল সিরিয়ার উপর তাদের সবচেয়ে বড় হামলা চালায়। একযোগে ২০০-এরও বেশি যুদ্ধবিমান সিরিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বোমা বর্ষণ করে।
হামলার মূল লক্ষ্য ছিল:
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কসহ হোমস, দেইর এজ-জর এবং লাতাকিয়ায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে কয়েক ডজন সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস হয়। সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং মিলিশিয়াদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব তাদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার সুযোগ দেয়নি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার ফলে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। রাশিয়া এবং ইরান এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রথমদিকে ইসরায়েলকে সমর্থন জানালেও পরে সংঘাত প্রশমনের আহ্বান জানায়।
জাতিসংঘে সিরিয়ার প্রতিনিধিরা এই হামলাকে "যুদ্ধাপরাধ" হিসেবে অভিহিত করে। তবে ইসরায়েল তাদের অবস্থান অটল রাখে এবং জানায়, এটি ছিল তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক।
সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি
এই হামলার পর সিরিয়ার ভেতরকার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী ইসরায়েলি হামলাকে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহার করে। ইরান এবং হিজবুল্লাহ আরও সংঘবদ্ধ হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে।
উপসংহার
ইসরায়েলের এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিকে নতুন দিকে ধাবিত করে। সিরিয়া, যা ইতিমধ্যেই বিভক্ত ছিল, এই হামলার ফলে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সিরিয়া একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ নেয়।
আসাদের পতনের পর সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই আশাবাদী ছিল, কিন্তু এই হামলা প্রমাণ করে যে, ক্ষমতার শূন্যতা প্রায়শই আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনে। একদিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা জোরদার হয়, অন্যদিকে সিরিয়া আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়। এর শেষ কোথায়, তা এখনো অনিশ্চিত।
0 تعليقات